Sunday, April 26, 2009

সুইশ ব্যাঙ্ক ও ভারতীয় অর্থনীতি

সুইশ ব্যাঙ্কে জমা থাকা ভারতীয় টাকা ও কালো টাকার বিষয়ে আজ দেশ জুড়ে যে আলোচনা চলছে এই বিষয়ে আমিই প্রথম দৃষ্টি আকর্ষন করি। গত ২৪ই ফেব্রুয়ারি,২০০৯ লোকসভায় Interim Budget (2009-10)’এর আলোচনায় আমি এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করি। ওইদিনের আলোচনায় আমি আমি যা যা বলেছিলাম সেগুলিই এই ব্লগে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

এই Interim Budget’এর কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল এটা সত্য, কিন্তু তা হলেও আরো অনেক ভালভাবে এই বাজেটকে করার সুযোগ ছিল কি না সেটা দেখে নেওয়া জরুরী ছিল বলে আমার ধারণা। গত কয়েক বছরে যদি আমরা দেখি, যেটা আমরা করেছি আসলে-স্বাধীনতার পর আমরা অনেকগুলো বছর পার হলাম, ৬০/৬১ বছর হয়ে গেল, কিন্তু দেশের মধ্যে দুটো দেশ…তার ত ক্রমশ ক্রমশ বিভক্তি বাড়ছে। এটা ঠিক যে ইন্ডিয়া ইস শাইনিং, আবার এটাও ঠিক যে ভারত ইস সাফারিং। একটা দেশের মধ্যে দুটো দেশের এই যে ফারাক, তা একটা ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক ইঙ্গিতের দিকে আমাদের আস্তে আস্তে নিয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিক যে আমাদের দেশে ৫৫ জন বিলিওনেয়ার আছেন, তারা পৃথিবীর অন্যদের সঙ্গে তুলনীয়, এটাও ঠিক যে আমাদের দেশে গত একটা বছরে ২৩০০০ মিলিওনেয়ারের সংখ্যা বেড়েছে, সেটা একটা অংশ। কিন্তু বিপরীতে, ৭৭% জনসংখ্যা, অর্জুন সেনগুপ্ত কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, যাদের দৈনিক আয় কুড়ি টাকার নিচে, কি হবে তাদের ভবিষ্যত? অসঙ্গঠিত শিল্পের বিল গৃহিত হয়েছে, কিন্তু আমরা কেউ এখনো জানি না সেই বিলের সুপারিশ কি কি ফলপ্রসু করা হবে। কৃষক আত্মহত্যা বাড়ছেই, সেটা কিন্তু কমছে না এখনো। অনেক ঋণদান প্রকল্প হয়েছে, বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু সমাধানটা কোথায়? অথচ ১৮% জি.ডি.পি চাষের উপর নির্ভর করে। ফলে ক্রমশ এই যে সেক্টরটা আমাদের দেশের সঙ্কটকে যেভাবে বাড়াচ্ছে, সেই সঙ্কট থেকে বেরোনোর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব যথেষ্ট। এটা কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এবং ক্রমশ ক্রমশ বাড়ছে। মুল্যবৃদ্ধি ভয়ংকর...মুদ্রাস্ফিতি খানিকটা কমে এসেছে বলা হচ্ছে, ঠিক, কিন্তু তাহলে দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির হার, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, সেটার বৃদ্ধির হার তো কমছে না। একটা বড় অংশের মানুষের ধরাছোয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে জিনিসের দাম। ফলভোগ করছেন মূলত তলার দিককার মানুষেরা। এটা আমাদের খেয়ালের মধ্যে নিয়ে আসা দরকার। বিপিএল-এর প্যারামিটারটা কিন্তু এখনো স্পষ্ট নয়। বিপিএল যে প্যারামিটারে করা হচ্ছে তা থেকে আমরা কেউ-ই বলতে পারব না যে সত্যি সত্যি আমরা প্যারামিটার অনুযায়ী-ই কাজ করতে পারছি। কোথাও এপিএল বিপিএল হয়ে যাচ্ছে, কোথাও বিপিএল তার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এবং এটা একটা গোটা দেশের সর্বত্র একটা বড় সামাজিক অস্থিরতা তৈরির দিকে গোটা দেশকে নিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় কিভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা আমরা করব সেদিকে আমাদের এবার নজর দেওয়া উচিত। আসল কথাটা হল রাজনৈতিক ইচ্ছা।

সুইশ ব্যাঙ্ক সংস্থার ২০০৬ এর রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে পাঁচটা দেশের টাকা ওখানে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে, তাদের মধ্যে শীর্ষে আছে ভারত, এবং তার বিনিয়োগ করা টাকার পরিমাণ পঞ্চম দেশের তুলনায় বহুগুণ, প্রায় ১৫ গুণ। এবং এই ১৫৪৬ বিলিয়ন ডলার, যেটার ভারতীয় মুদ্রায় মূল্য হয় প্রায় ৭০ লক্ষ কোটি টাকা, সেটা আমাদের যা বৈদেশিক ঋণ আছে তার ১২-১৩ গুণ। কোথা থেকে এই টাকাটা আসছে? কিভাবে এটাকে রাখা হচ্ছে? কে রাখছে? দেশের সম্পদের সাথে এটাকে যুক্ত করার কি সুযোগ আছে? আমরা যদি সেটা না ভাবি, আমরা আসলে এক চোখ দিয়ে দেখব। সমস্যার সমাধানের দিকে যেতে পারব না। কালো টাকার প্রশ্নটাও এক-ই রকম প্রাসঙ্গিক। এটা একটা সমান্তরাল অর্থনীতি। প্রতিবার আলোচিত হয়, প্রতিবার আমরা সবাই উদবেগ প্রকাশ করি, সারা সংসদ উদবেগ প্রকাশ করে, কিন্তু সমাধানের কোনও পথ বেরয় না। কিভাবে আমরা এর থেকে বেরিয়ে আসব, এই মনোভাব নিয়ে আমরা যদি না চলি, আমার ধারণা, তাহলে আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে, যে ক্ষতির মুখোমুখি কিন্তু আমরা দাঁড়িয়ে আছি। দেশ মানে দেশের আম-আদমি, দেশের বেশীরভাগ অংশের মানুষ, সেই মানুষের জন্য সঠিক পরিকল্পনা রুপায়ণে তাহলে অসুবিধা দেখা দেবে।

আমরা অনেকদিন এই কথাটা বলছিলাম, আমাদের যে বৃদ্ধি নিয়ে এত গলা ফাটানো হয়, সেটা কোনো জীবিকা তৈরি করে না। বৃদ্ধির হার ভালই হচ্ছে, কিন্তু মানুষের হাতে কাজ নেই! গত ৩ মাসে বলা হচ্ছে ৫ লক্ষ কর্মচ্যুতি হয়েছে। অবশ্যই এটা একটা অসম্পুর্ণ রিপোর্ট। আসল সংখ্যাটা এর থেকেও অনেক বেশি। কিন্তু আর কত কর্মচ্যুতি হবে? কোথায় যাচ্ছে এত কাজ? ঠেকাব কি করে এত কর্মচ্যুতি? এই ভাবনায় আমাদের একটা কোথাও দূর্বলতা আছে। মেইন সেক্টর হচ্ছে কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প ইত্যাদি। আপনি যদি দেখেন, ক্ষুদ্র শিল্পে ব্যাঙ্ক ঋণ সহজে পাওয়া যায় না। যদি পাওয়াও যায়, সুদের হার খুব বেশী। বৃহত ঋণ যারা নেবে, তাদের ক্ষেত্রে সুদের হার কম!! হওয়ার কথা ছিল, ক্ষুদ্র শিল্পে সুদের হার কম হবে। হচ্ছে ঠিক তার উলটো। আমার মনে হয় একটু ভাল করে যদি আমরা না দেখি, এই অবস্থা থেকে আমরা বেরতে পারব না। এক-ই রকম ভাবে, স্বামীনাথন কমিটি প্রস্তাব দিয়েছে, কৃষকদের ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার ৪% এ নামাতে হবে...এখন দাড়িয়ে আছে ৭%-এ। ফলে আমাদের প্রায়োরিটি সেক্টর কে সর্বাগ্রে গুরূত্ত দেবার দৃষ্টিতে কি আমরা আমাদের দেশ, অথবা দেশের বাজেট, অথবা দেশের প্ল্যানিং কে এগিয়ে নিয়ে চলেছি? মনে হয় না। আমি যেটা বলে শেষ করব তা হচ্ছে এই, অন্তত ৪/৫ খানা মেজর সেক্টর আমাদের দেশে আছে, যেমন ‘R & D’, যার থেকে গুরূত্তপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না। আমাদের এত বিপুল সম্ভাবনা, শিক্ষা, সেখানে ৬% বাজেট বরাদ্দ আমরা কবে করব? আমাদের গবেষণা ক্ষেত্রে আমরা অন্তত ১% বাজেট বরাদ্দ কবে করব? আমাদের অসঙ্গঠিত ক্ষেত্র, তার জন্য ৩% সহায়ক ব্যাবস্থা, আমরা কবে করব? আমাদের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ৫% বরাদ্দ আমরা কবে করব? আমরা কিন্তু ঘোলা জলের মধ্যে রয়েছি। যেভাবে আমাদের চলা উচিত, সেটা আমরা স্পষ্ট করে বলছি না।

আমি শেষ করছি, শুধু একটাই কথা বলার। বহুদিন আগে লালবাহাদুর শাস্ত্রী বলেছিলেন, “জয় জওয়ান, জয় কিষাণ।“ সবাই আমরা খুশী হয়েছিলাম। তারপরে বহুবছর কেটে গেছে। কৃষকের জয় হয়নি, যুবকের জয় হয়নি। বরং আমাদের মুল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, এবং কৃষকের মুল সমস্যাগুলো এখনো সমাধান করার পথে যাওয়া হচ্ছে না, আমরা ওপরে ওপরে দেখছি, কিন্তু গভীরে দেখছি না। শাইনিং ইন্ডিয়ার কথা ভাবছি, সাফারিং ইন্ডিয়ার কথা ভাবছি না।এটাই হল আমাদের অর্থনীতির মূল ত্রুটি। কিভাবে সেটা কাটানো হবে সে বিষয়ে U.P.A. সরকার কোনো পদক্ষেপ মনোভাবই দেখায়নি। আমরা বামপন্থীরা আশা করব আপনারা আমাদের সমর্থন করে ভবিষ্যতে আমাদের ভাবনাচিন্তার সমর্থক হবেন।

(আমার লোকসভার আলোচনার ভিডিও দেখার জন্য www.sujan.info/video.html দেখুন )

Saturday, March 28, 2009

প্রথম

গত ৩০ বছরের বেশী ধরে বামপন্থী রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত আছি। যেখানে থাকি ও বেড়ে উঠেছি সেই এলাকার ছাত্র যুব কৃষক শ্রমিক ও খেটে খাওয়া সাধারন মানুষের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রাম আর উন্নয়নের জন্যে আন্দোলনের সাথেও সরাসরি যোগাযোগ বহুদিনের, বহুবছরের। আমার চারিপাশের মানুষ জনের কথা, তাদের চাহিদা, তাদের চিন্তা ভাবনা, দুঃখ কষ্ট ব্যথা বেদনা অসুবিধা আর আশা আকাঙ্ক্ষার কথা আরও অনেক বড় পরিপ্রেক্ষিতে তুলে ধরার জন্যেই প্রথমত আমার রাজনীতিতে পদার্পন। আর আমাদের দেশে বামপন্থীরা ছাড়া আর কেউই সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না, বলে না, আর তাই বামপন্থীদের সাথেই আমিও জুটে গেছি, আপনাদের মতই। এই কদিন আগেও Outlook বলে একটা magazine এ পড়ছিলাম যে বামপন্থী রা না আটকালে আজকে আমাদের দেশ ও America-র মত অথঁনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়তো, বহু মানু্যের চাকরি যেত, অনাহার বাড়তো, সংকট বাড়তো। Congress আর BJP দুই দল ই উদারনীতির পথিক, যে উদারনীতি আরেকটু হলেই আমাদের দেশ কে অথঁনৈতিক সংকট ও মন্দার মধ্যে ফেলতো আমরা, বামপন্থীরা না আটকালে। মনুবাদী - হিন্দুত্ববাদীরা আবার সরাসরি সাম্প্রদায়িক। মানুযে মানুযে বিভেদ তৈরী করে ধর্মের নামে। গত লোকসভা তে বামপন্থীদের বড় কৃতিত্ব ১০০ দিনের কাজের দাবি আদায়, এখন শুনছি আবার নাকি World Bank পরামর্শ দিয়েছে এই ১০০ দিনের কাজের NREGA scheme বন্ধ করার। একবার ভাবুন, সংসদে এবারে বামপন্থীরা বড় ভাবে না থাকলে কি হতে চলেছে। গত লোকসভা তে বামপন্থীদের আরেকটা বড় কৃতিত্ব BJP জমানার সরকারি লাভজনক সংস্থার বিলগ্নিকরনের ভ্রান্ত নীতি বন্ধ করা। সামনের লোকসভা তে বামপন্থীরা চাইছে তৃতীয় বিকল্প সরকার তৈরী করতে, ধর্মের নামে মানুযে মানুযে হানাহানি না হয়, উদারনীতির নামে মানুষের জীবিকা বন্ধ না হয়, এই হল লক্ষ্য। আর তারই সাথে বাংলার উন্নয়ন, আরও কর্মসংস্থান ও জীবিকা সৃষ্টি, আরও চাকরী, শান্তি ও সম্প্রীতি, এই হল আমাদের লক্ষ্য। আশা করি আপনারা এই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের সাথে থাকবেন আর বামপন্থীদের দিকে দিকে জয়ী করবেন।

এই আমার প্রথম Internet Blog লেখা, কিছু ভুল থাকতে পারে। আপনাদের কথা শুনতে চাই, আপনারাও এখানে লিখুন, প্রশ্ন করুন, মতামত দিন, সময় সুয়োগ করে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। সময় করে নিজেও লিখব যতটা পারি।